শেষ চিঠি
প্রিয়তমা,
'আজ ভালো আছি কি না, জানাবো না।' হঠাৎ তোমায় মনে পড়ায়, আমি সুদূর দরিয়ার মাঝে পাল হীন জাহাজে বাড়ি ফেরার আশায় নতুন স্বপ্ন দেখছি।
তবে, তোমায় নতুন করে পাবো বলে সাজিয়ে রেখেছি পুরনো খামের মধ্যে অনেক চিঠি। আমি ছন্দে, ডায়েরির একদম প্রথম পাতায় রেখেছি তোমায়।
'অনেক কিছু বলার ছিল তোমায়। '
বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফেরার আনন্দ গুলো আজ স্মৃতি হয়ে গেছে। এখন সন্ধ্যার পরে আমার একলা বসে থাকার মুহুর্ত গুলো, তোমার ভালোবাসার আশায় প্রহর গুনছে।
প্রতিদিন পুরনো ধাঁচে নিজেকে রঙিয়ে দেওয়া আমি, স্বর্গীয় আর আমিত্বের মধ্যে তফাত খুঁজে পাচ্ছি না। মনভরে কাঁদার ইচ্ছা আর কিসের অভিমানে, ভালোবাসার এই পৃথিবীকে কখন, কিভাবে ঘৃণীত বালুচরের সাথে গুলিয়ে ফেলেছি তা জানতে পারিনি। এক চরম আকাঙ্খা আমাকে চালিত করছে বন্য জন্তুর ভয়ার্ত আর্তনাদের বিষন্ন বিঘ্নিত পথে। জীবন যেখানে নিস্তব্ধ খাঁচায় বন্দী। শত শত নর্তকীর মাঝে নিঝুম ভাবে দাঁড়িয়ে আমার, একেবারে আমার প্রাণের সমাধিস্থ গোলাপের শীতল ছায়ায় আমি তোমায় খোঁজার চেষ্টা করছি।
একদিন চিঠির খামে এভাবেই হয়তো বিলীন হয়ে যাব।
সেদিন তোমাকে শুধু ক্রন্দন আর অসহায়তা গ্রাস করবে। নিজেকে আত্মাহীন মনে হবে তোমার। আমার অভাব সেদিন তোমার আনন্দ-বিলাসিতা আর তোমার আরবি রুবির জাঁকজমকের থেকেও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
সেদিন তুমি আমায় চিনতে পেরে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করবে। চেষ্টা করবে প্রতিটি চিঠির খামে থাকা ভালোবাসা গুলোকে নিঙড়ে তোমার ছোট্ট ঝিলে বির্সজন দেওয়ার। কিন্তু কি করি, ভালোবাসার বির্সজন হয় না।
বাংলার গান
আমি লিখছি না কোনো কবিতা,
কোনো লায়লা কিংবা,
শকুন্তলার আর্তনাদ।
না কোনো মহাভারত।
আমি লিখছি তোমার আমার গান।
লিখছি, সাঁওতালি ঝুমুর আর
একতারার প্রতিদান।
বিনয়ী-সিধে মেষপালকের পায়চারি,
আমার বাংলার আঙিনায়,
তারই দু-চার কথার অভিধান।
আমি লিখছি না কোনো সমাবেশ
কোনো মিছিল, খুনোখুনি।
কিংবা কোনো ঘুমিয়ে থাকা,
জাতির বাউল।
না কোনো মহাজন,
না কোনো শাসকের কথা।
আমি লিখছি বহুতলের ধারে ঝুপড়ির কথা।
রসিক বাঙালির ছোঁয়াচে আড্ডার,
আদুরে টেবিলের ঘনঘটা।
লিখছি, পূজোর ঢাকের আনন্দ,
আর ঈদের চাঁদে উপবাসের সমাপ্তি।
লিখছি ,আত্মা আর সাহিত্যর মিলন,
সাহস আর নম্রতার স্পন্দন।
লিখছি তোমার আমার গান।
Subscribe to:
Posts (Atom)